
একটি মর্মান্তিক ও ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড দনিয়া কলেজকে নাড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে কিশোর গ্যাংয়ের দলবদ্ধ আক্রমণে ২৫ বছর বয়সী ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র মিনহাজুর রহমানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
তার শেষ কথা, “কিরে তোরা কি আমারে মাইরাফালাবি? আমারে কি তোরা বাঁচতে দিতি না?” প্রতিধ্বনিত হয় যখন তার আক্রমণকারীরা কোন দয়া দেখায়নি।
কিশোর গ্যাংয়ের পরিকল্পিত আক্রমণ
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে, কিশোর গ্যাং নেতা মাহফুজ ওরফে কিং মাহফুজের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি দল দনিয়া কলেজের সামনে মিনহাজের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি এবং ছুরি দিয়ে সজ্জিত হয়ে তারা তাকে কলেজের প্রথম গেটের দেয়ালে আটকে রাখে এবং বারবার ছুরিকাঘাত করে।
তার বন্ধু আহাদ আসলাম, যে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিল, সেও আক্রমণে আহত হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, শত শত দর্শকের উপস্থিতি সত্ত্বেও, কেউ এই নৃশংস আক্রমণ থামাতে সাহস করেনি। মিনহাজ তার জীবন বাঁচানোর জন্য আবেদন করেন, কিন্তু হামলাকারীরা কেবল তখনই থামে যখন তারা নিশ্চিত হন যে তিনি মারা গেছেন।
পরিবার, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা
চার ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মিনহাজুর রহমান, কদমতলীর সাদ্দাম মার্কেটের তুষারধারা এলাকায় তার পরিবারের সাথে থাকতেন। তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং তার স্ত্রী বর্তমানে গর্ভবতী। তার বাবা হাফেজ ক্বারি মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ উলামা পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত একজন ছাত্রনেতা, মিনহাজ দুর্নীতি, মাদকাসক্তি, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসবাদের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিলেন। দনিয়া পাটেরবাগ এবং নূরপুর এলাকায় গ্যাং কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তার প্রতিরোধ তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। দনিয়া কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় তীব্র বিরোধের পর বাদশাহ মাহফুজের সাথে শত্রুতা আরও বেড়ে যায়, যা শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যার দিকে পরিচালিত করে।
পরবর্তী ঘটনা এবং তদন্ত
আক্রমণের পর, মিনহাজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার বড় ভাই যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বুধবার বিকেলে, দনিয়া কলেজে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শোকাহত শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সম্প্রদায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজার পর, তাকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মিনহাজের শ্যালক খালিদ মাহফুজের মতে, পূর্ব বিরোধের কারণে এই হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি দাবি করেছেন যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে মাহফুজ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
জনসাধারণের ক্ষোভ এবং বিচারের দাবি
মিনহাজের মর্মান্তিক মৃত্যুতে তার পরিবার, কলেজ সম্প্রদায় এবং নিজ শহর গভীর শোকে ছেয়ে গেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়রা হত্যাকারীদের বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য দনিয়া কলেজের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. সবুজ নিশ্চিত করেছেন যে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুনঃ অগ্রণী ব্যাংক থেকে ভিক্ষুকের ‘৯৩ হাজার টাকা’ নিয়ে পালালেন প্রতারক
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড কিশোর গ্যাং সহিংসতার ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে। মিনহাজের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে কিনা তা দেখার জন্য জাতি এখন নিবিড়ভাবে তাকিয়ে আছে।

My name is Ashikur Rahman. I am an entrepreneur. I can create e-commerce and news portal websites and I am also a graphic designer. I have skills in SEO optimization. This website is made by me. The contents of this website are collected from Google and various news portal websites and are made in a unique way.