অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বারোপ ড. ইউনূসের

নোবেল বিজয়ী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যা নিশ্চিত করে যে সকল বাংলাদেশী নাগরিক ভয় বা বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পারবেন। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) এর প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সাথে এক বৈঠকে ড. ইউনূস তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।

ড. ইউনূস ন্যায্যতা এবং সহজলভ্যতার নিশ্চয়তা দেয় এমন একটি ভোটদান ব্যবস্থা গড়ে তোলার জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশী তরুণদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি এমন একটি পরিবেশ তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরেন যেখানে জাতির ভবিষ্যত গঠনে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর থাকবে।

জুলাইয়ের বিদ্রোহ এবং বাংলাদেশের যুব সমাজের স্বপ্ন

আলোচনার সময়, ড. ইউনূস ২০২২ সালের জুলাইয়ের বিদ্রোহের কথা পুনর্বিবেচনা করেন, যখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের অবসানের দাবিতে একত্রিত হয়েছিল। তাদের আন্দোলন বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছে এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সাহসী স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে। ঢাকা জুড়ে গ্রাফিতির আকারে এই আকাঙ্ক্ষাগুলি দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল, যা পরিবর্তনের আশার প্রতীক।

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন

ডঃ ইউনূস এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশে নতুন ভোটাররা – যারা গত ১৬ বছরে যোগ্য হয়েছিলেন – এখনও তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। “এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক,” তিনি মন্তব্য করেন, তরুণ প্রজন্মকে নির্বাচনী অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতায়নের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে।

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে আরও আলোচনা করেন, উল্লেখ করেন যে জনগণ কী ধরণের নির্বাচনী প্রক্রিয়া চায় তা না বুঝে প্রশাসন নির্বাচনের সাথে এগিয়ে যেতে পারে না। ডঃ ইউনূস বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদী সংস্কার অনুসরণ করা উচিত নাকি আরও ব্যাপক, দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের পথ বেছে নেওয়া উচিত তা নির্ধারণে জাতীয় ঐকমত্যের গুরুত্বের উপর জোর দেন।

“মানুষ যদি দ্রুত সংস্কার চায়,” ডঃ ইউনূস বলেন, “আমরা এই বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। তবে, জাতি যদি গভীর, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দাবি করে, তাহলে প্রস্তুতির জন্য আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে।”

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন পুনরুদ্ধারের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি

ডঃ ইউনূস আজকের যুবসমাজকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা প্রযুক্তি দ্বারা গঠিত এবং রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে এই প্রজন্ম জাতীয় সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বিশ্বব্যাপী যুব আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিজেদেরকে চিহ্নিত করে। “এই প্রজন্ম পুরনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না,” তিনি বলেন। “আমাদের এমন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে যা তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।”

এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করছে যা রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ সংগঠন এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা করবে। কমিশন একটি ‘জুলাই চার্টার’ তৈরি করবে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ভাগ করা লক্ষ্য এবং কৌশলগুলির রূপরেখা দেবে।

রাজনৈতিক সংস্কারের বাইরে, ডঃ ইউনূস অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীলকরণ এবং ব্যাংকিং খাতের পুনরুজ্জীবন সহ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা জানান। তিনি বলেন, এই উন্নয়নগুলি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি তৈরির দিকে পদক্ষেপ।

উপসংহার

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আহ্বান, যুব-চালিত সংস্কারের উপর তার জোরের সাথে মিলিত হয়ে একটি উন্নত বাংলাদেশ তৈরির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে উৎসাহিত করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক জাতির ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্য রাখে।

সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের দ্বারা পরিচালিত এই রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি এবং অগ্রগতির জন্য প্রস্তুত একটি জাতি হিসেবে স্থান দেয়।

3 thoughts on “অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বারোপ ড. ইউনূসের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *